‘কথার জাদুকর’ হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ

0
50

কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের ৭৪তম জন্মদিন আজ। সহজ-সরল ভাষার মধুরতায় নান্দনিক মায়াজালের রূপকার তিনি। মানুষের মনের অলিন্দে গভীরভাবে নাড়া দিয়ে গেছেন। জীবন ও জগৎকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়ে, বাঙালি মন ও মননে রেখে গেছেন দীর্ঘ ছায়া। শনিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকেই নুহাশ পল্লীতে আসতে থাকেন হাজারো মানুষ। নিবেদন করেন শ্রদ্ধার্ঘ্য।

নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করা হুমায়ূন আহমেদ একাধারে লেখক, সাহিত্যিক, চলচ্চিত্র পরিচালক, গীতিকার, নাট্যকার এবং অধ্যাপক (রসায়ন) হিসেবে পরিচিত। তিনি ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা সাহিত্যের সংলাপ প্রধান নতুন শৈলীর জনক এবং আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পথিকৃৎ তিনি। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক। ১৯৭২ সালে ‘নন্দিত নরকে’ নামে তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়।

জীবনের প্রথম উপন্যাসের নামকরণ ছিল এক অসাধারণ বিস্ময়কর। সাথে উপন্যাসের চিত্রনাট্যে দেখিয়েছিলেন চৌকষ মুন্সিয়ানা। এতে সাহিত্যবিশারদগন তখনই বুঝতে পেয়েছিলে, বাংলা সাহিত্যে নতুন এক ধূমকেতুর আবির্ভাব হচ্ছে।

তার সৃষ্ট হিমু, মিসির আলী ও শুভ্র চরিত্রগুলির দিকে তাকালে বুঝা যায় তিনি আসলে ধূমকেতু না নক্ষত্র ছিলেন। তার হাতে গড়া চরিত্রগুলো তরুণ থেকে শুরু করে সবার ভিতরে এক গভীর স্পন্দন সৃষ্টি করেছে। হুমায়ূন আহমেদ জীবদ্দশায় ছিলেন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। এছাড়া ‘নন্দিত নরকে’ এবং ‘শঙ্খনীল কারাগার’ উপন্যাস দু’টি দিয়ে যাত্রা শুরু করে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কবি’, ‘বাদশা নামদার’সহ অসংখ্য উপন্যাসে। তার সর্বশেষ ‘দেয়াল’ উপন্যাসটিও পেয়েছে আকাশচুম্বী পাঠকপ্রিয়তা।

লেখালেখির সঙ্গে সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোও সবার কাছে বিশেষ সমাদৃত হয়। ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘শ্যামল ছায়া’, ও ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ চলচ্চিত্রগুলোর জন্য তিনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এছাড়া তার নির্মিত ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘অয়োময়’ ও ‘বহুব্রীহি’ বাংলা নাটকের অমর সৃষ্টি।

হুমায়ূন আহমেদ তার দীর্ঘ চার দশকের সাহিত্যজীবনে ভূষিত হয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কারে। এরমধ্যে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, লেখকশিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার অন্যতম। এছাড়া বিভিন্ন সময় দেশের বাইরেও সম্মানিত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ।

হুমায়ূন আহমেদ তার শৈলীতে ভক্তদের মুগ্ধ করে রেখেছেন অনেককাল। তিনি ভক্তদের মাঝে আছেন, তাইতো বিশ্বলোকে এখনো তার জন্মদিন উদযাপিত হয় আনন্দ-বিষাদে ফুলেল সমারোহে। নুহাশ পল্লীতে ছিলেন, হুমায়ূনের পরিবারের সদস্যরাও।